আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে আমি কোলিয়ারি থেকে এসে হুগলি নদীর পশ্চিম পারের এক নামী বিশাল প্রতিষ্ঠানে যোগ দিলাম । পদোন্নতি হতে বছর কয়েক পর কোম্পানির
estate এ উঠে এলাম। প্রথমে এক কামরার সুখি গৃহ কোন । পদোন্নতির সাথে সাথে আরো বেশি যায়গার বড় ফ্ল্যাট । 1980 নাগাদ , আমি গাড়ি সুপারেনটেনডেনট হলাম (এই পদে এলে কোম্পানি অর্ধ লাখ টাকা গাড়ি কেনার জন্য ধার দিত বিনা সুদে।তাই দুষ্টু লোকদের এই নামকরন)।এবং নুতন আবাসে উঠে এলাম ।189 নম্বর । তখনো কোম্পানির নেই নেই করে অনেক কিছুই আছে । ফায়ার ব্রিকস রঙের পর পর দোতলা বাড়ি,ইঁট বের করা প্লাস্টার ছাড়া।সামনে এক ঝাঁক উজ্জ্বল মানেজমেনট Trainee দের বাসস্থান Bower, একপাসে Scouts den, অদুরে টেনিস কোর্ট ,,ক্লাব রাস্তার ওপারে swimming pool, Squash খেলার ঘর। হিন্দি বাংলা দুটো হাই স্কুল ।গড়ে ওঠার মুখে ইংরেজি মাধ্যমের আরেক টা স্কুল। অদুরে স্টেডিয়াম, বিরাট চত্বরের সুবিশাল স্বপ্নের নগরী।নববর্ষে প্রভাত ফেরি, ক্লাবে রবীন্দ্র সন্ধ্যা, কুইজের আসর। ড্রামাটিক ক্লাব। আমাদের একজন টেকনিক্যালের বন্ধু "মদন হাজিরে"
তার অসামান্য অভিনয়ের জন্য মদন নামের আড়ালে নিজের নামটাই হারিয়ে ফেললো।
সে ছিল সাহিত্য কৃষ্টির যুগ। একবার কতৃপক্ষ তখন কার বিখ্যাত কবি সাহিত্যিক দের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কারখানা দেখার জন্য । 1981 সালের ঘটনা । বিকেলে তাঁরা স্কাউট ডেনে আবাসনের মহিলাদের সাথে ইনফরমাল আলাপ চারিতায় যোগ দিলেন । কে আসেন নি।, নীরেন চক্রবর্তী,সুনীল গাঙ্গুলি, শংকর,শংকরী প্রসাদ,কবিতা সিংহ বিমল মিত্র, অমিতাভ চৌধুরী, সাগর ময় ঘোষ,শীর্ষেন্দু,পার্থসারথি চৌধুরী আরো অনেকে। সে এক ঢাকাই শাড়ির প্রদর্শনী।শোনা যায় সে বছর বসাক বস্ত্র ফেরির টার্ণ্ ওভার সর্ব কালের রেকর্ড ভেঙে ছিল। যে বছর ভারত ক্রিকেটে
world কাপ জিতল,আমরা আবাসনের সবাই বাজি ফাটিয়ে উৎসবে মাতলাম। "এক জাতি একপ্রাণ একতা।"
কয়েক বছর পর যে দিন ইন্দিরা গান্ধী নিহত হলেন, সারা দেশে শিখ নিধন শুরু হলো। সন্ধ্যার মুখে একদল লোক লাঠি সোটা নিয়ে এসে হাজির আমাদের পাসের ফ্ল্যাটে।যার জন্য এসেছিল আমাদের সম্মিলিত
প্রচেষ্টায় সে ততখনে গুরুদ্বারের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে গেছে। সে ছিল আরেক একতা।
এর কিছু দিন আগে আমাদের দোতলার ঘরে উঠে এলেন আমাদের আরেক& জন সহকর্মী। বন্ধুবর আমার থেকে ব্য়সে বেশ ছোট।চারটাড একাউন্টেট ,বাবা জেলা জজ ছিলেন,আমাদের একাউন্টস বিভাগের সেজো সাহেব ।ওর ছেলের বয়স তখন বড়ো জোর চার। অচিরে আমার গিন্নি আর মেয়ের সে বন্ধু হয়ে গেল । সারা দিন প্রায় তার আধো আধো গলায় আমাদের মাতিয়ে রাখতো। "দড়ি ধরে মারো টান চলে যাবে বর্ধমান "। এ একটা নমুনা মাত্র ।
বন্ধুর রান্নার শখ ছিল ।দো তলা থেকে প্রায় নেমে আসতো অদ্ভুত অদ্ভুত রান্নার স্বাদ, ।
শিশু ভুট্টা ছানার পাঁচ মিসেলি,থোড় চিংড়ির পোলাও , ডুমুর ছোলার কোপ্তা আরো কতকি। তখন সুদীপার রান্না ঘর ছিলো না। "থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়ের"মেনুতে বৈচিত্র্য আনার কালচার তখনো সে ভাবে শুরু হয়নি।
ওদিকে খাটি সাহেব দের ফেলে যাওয়া ক্লাবে বার ছিল, কিন্তু তেমন ডিনার এ ব্যাবস্থা ছিল না। জিটি রোড বরাবর রেল গেট পেরিয়ে একটা পাঞ্জাবী ধাবা ছিল ।দরকার পড়লে দেশী সাহেব রা সেখানে ছুটতেন কয়েক জনের অনুরোধে ক্লাবের রান্নাঘরের দায়িত্ব নিলেন বন্ধুবর । ক্লাবের চেহারা বদলে গেল । ছেলে মেয়েরা তাদের সময় সীমার মধ্যে কাকুর রান্নাঘরে ভিড় জমালো, একক কত্তা গিন্নীর সংসারে প্রায় ই রাতে হাড়ি চড়া বন্ধ হোল।এমন কি আমার মতো ম্যাড় ম্যেড়েরা সন্ধ্যার পর ক্লাব মুখো হতাম,ফিরতাম পারসেল হাতে। স্বাদে গন্ধে ভরপুর সঙ্গে চার্টাড একাউনন্টের বিদগ্ধ স্পর্শ ।রান্নার সংগে বন্ধুবর সাহিত্যের শিল্পের মেল বন্ধন ঘটিয়ে ছিল ।রান্নাঘরের পশচাত পটে জ্বল জ্বল করতো নিরদ সি চৌধুরী র উক্তি "Eating well, ... ìs part of the culture of every civilised society বা সুকুমার রায়ের
"খাই খাই করো কেন, এসো বস আহারে খাওয়াবো আজব খাওয়া , ভোজ কয় যাহারে।
প্রচেষ্টায় সে ততখনে গুরুদ্বারের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে গেছে। সে ছিল আরেক একতা।
এর কিছু দিন আগে আমাদের দোতলার ঘরে উঠে এলেন আমাদের আরেক& জন সহকর্মী। বন্ধুবর আমার থেকে ব্য়সে বেশ ছোট।চারটাড একাউন্টেট ,বাবা জেলা জজ ছিলেন,আমাদের একাউন্টস বিভাগের সেজো সাহেব ।ওর ছেলের বয়স তখন বড়ো জোর চার। অচিরে আমার গিন্নি আর মেয়ের সে বন্ধু হয়ে গেল । সারা দিন প্রায় তার আধো আধো গলায় আমাদের মাতিয়ে রাখতো। "দড়ি ধরে মারো টান চলে যাবে বর্ধমান "। এ একটা নমুনা মাত্র ।
বন্ধুর রান্নার শখ ছিল ।দো তলা থেকে প্রায় নেমে আসতো অদ্ভুত অদ্ভুত রান্নার স্বাদ, ।
শিশু ভুট্টা ছানার পাঁচ মিসেলি,থোড় চিংড়ির পোলাও , ডুমুর ছোলার কোপ্তা আরো কতকি। তখন সুদীপার রান্না ঘর ছিলো না। "থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়ের"মেনুতে বৈচিত্র্য আনার কালচার তখনো সে ভাবে শুরু হয়নি।
ওদিকে খাটি সাহেব দের ফেলে যাওয়া ক্লাবে বার ছিল, কিন্তু তেমন ডিনার এ ব্যাবস্থা ছিল না। জিটি রোড বরাবর রেল গেট পেরিয়ে একটা পাঞ্জাবী ধাবা ছিল ।দরকার পড়লে দেশী সাহেব রা সেখানে ছুটতেন কয়েক জনের অনুরোধে ক্লাবের রান্নাঘরের দায়িত্ব নিলেন বন্ধুবর । ক্লাবের চেহারা বদলে গেল । ছেলে মেয়েরা তাদের সময় সীমার মধ্যে কাকুর রান্নাঘরে ভিড় জমালো, একক কত্তা গিন্নীর সংসারে প্রায় ই রাতে হাড়ি চড়া বন্ধ হোল।এমন কি আমার মতো ম্যাড় ম্যেড়েরা সন্ধ্যার পর ক্লাব মুখো হতাম,ফিরতাম পারসেল হাতে। স্বাদে গন্ধে ভরপুর সঙ্গে চার্টাড একাউনন্টের বিদগ্ধ স্পর্শ ।রান্নার সংগে বন্ধুবর সাহিত্যের শিল্পের মেল বন্ধন ঘটিয়ে ছিল ।রান্নাঘরের পশচাত পটে জ্বল জ্বল করতো নিরদ সি চৌধুরী র উক্তি "Eating well, ... ìs part of the culture of every civilised society বা সুকুমার রায়ের
"খাই খাই করো কেন, এসো বস আহারে খাওয়াবো আজব খাওয়া , ভোজ কয় যাহারে।
1988 নাগাদ আমরা অদুরে নিজে হাতে গড়া খাসা -ঘরে উঠে গেলাম । পিছনে ফেলে এলাম আমাদের অতিপ্রিয়-189।প্রায় চল্লিশ বছর আগের স্মৃতি। কিছুটা ধুসর। কয়েক দিন আগে সেই স্বপ্ন পুরিতে যেতে হয়েছিল । জঙ্গল ভরা ধূধূ প্রান্তর, কোথায ক্লাব কোথায Bower, কোথায় হসপিটাল (যেখানে আমার মেয়ে জন্মে ছিল) আর আমাদের ফ্ল্যাট 189.?
যে প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশ আমাদের ও অন্য অনেক কে জীবনে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে, করপোরেট জগতে দিকপাল
সৃষ্টি করেছে, যে প্রতিষ্ঠান শত মানুষের রুজি রোজগার দিয়েছে, যে পরিবেশ তাদের গড়ে ওঠার
স্বপ্ন দেখিয়েছে , কোন দানবের গদার আঘাতে তার সবটাই ধুলোতে মিশে গেছে!, সবই স্মৃতি হয়ে আছে। সঙ্গে নিয়ে গেছে এত মানুষের স্মৃতি সুধা।
189 কিন্ত শুধু স্মৃতি নয়, একটা দীর্ঘশ্বাস ।
No comments:
Post a Comment